এক্স বয় ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হবার পরে

কাজী ওয়াজেদ মিয়া : মলিন মুখে ফুফু আর বাবাকে নিয়ে কক্ষে ঢুকলো অনার্স পড়া মেয়েটি। দেখে মনে হলো চরম মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত মেয়েটি। রাজ্যের হতাশা আর উৎকন্ঠা নিয়েই কিছু ছবি হাতে দিয়ে কাঁপা কন্ঠে বললো তার অভিযোগের কথা। এক্স বয় ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হওয়ায় উক্ত নরাধম তার আত্মীয়-স্বজনের ফেইসবুক ম্যাসেজ্ঞার, ইমো, হোয়াটসআ্যপসে পাঠাচ্ছে ইতোপূর্বে তারই পাঠানো অন্তরঙ্গ মূহূর্তের অত্যন্ত আপত্তিকর সব ছবি। বিব্রতকর সেসব ছবি পাঠিয়ে ব্লাকমেইল করা হচ্ছে, ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এই ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে জড়িত জঘন্য সেই অপরাধীকে সাইবার ক্রাইম ইউনিট কর্তৃক গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হলো। করা হলো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা। কিন্তু মেয়েটি আর তার পরিবারের হৃত সন্মান ফিরিয়ে আনা আর লোক লজ্জার হাত থেকে বাঁচার কি হবে?
এই ঘটনায় একজন অভিভাবক হিসেবে নিজেকে কল্পনা করতেই গা শিউরে উঠে! জানি প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সমাজে। কিন্তু অনেকেই সাহস করে বিষয়টা প্রকাশ করতে না পারায় দিনের পর দিন ব্লাক মেইলিং এর শিকার হচ্ছে অসংখ্য মেয়ে। জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে তীলে তীলে। বাস্তবে পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে অনেক লোমহর্ষক ঘটনাই। ভালবাসার নামে কথিত সম্পর্ক যখন নোংরা দিকে মোড় নিচ্ছে ঠিক তখনই সঙ্গী নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া মেয়েটির অতি বিশ্বাসে ভাঙ্গন ধরছে। সরলতার সুযোগ নিয়ে কুলাঙ্গার ছেলেগুলো মেয়েগুলোর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতির কিছুটা দায় মেয়েটিরও। কিন্তু আমাদের পক্ষে তো এই দূ্র্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল।
মেয়েটিকে একা দায়ী করেই কি আমরা পার পেয়ে যাবো ? অভিভাবক হিসেবে আমরা আমাদের মেয়েটির মধ্যে ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি আর জীবন এবং চরিত্র গঠনে কতটুকু সক্ষমতা অর্জন করাতে পেরেছি ? জীবনের কঠিন বাস্তবতার নিরিখে উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত অভিভাবকসুলভ কাজ কি আমরা কখনো করেছি? যদি না করেই থাকি তবে তো সে সঙ্গী নির্বাচন আর ভালবাসার চুড়ান্ত পরিনতির পবিত্র ধাপে পৌঁছানোর আগে ভুল সিদ্ধান্ত নিবেই ! আর তার নেওয়া অসম সম্পর্কের অশুভ পরিনতির কারনেই তো সে সহ পুরো পরিবার ব্লাকমেইল হচ্ছি আর না হয় ধর্ষন মামলা করে পরিত্রানের পথ খুঁজছি। কিন্তু এটা তো কোনো সুষ্ঠ সমাধান না। শাস্তি হয়ত অনেকের জন্য বার্তা বা দৃষ্টান্ত হতে পারে। কিন্তু এটাই কি প্রকৃত সমাধান ? ধর্মীয় আর যথাযথ নৈতিক শিক্ষা কি আমরা সেভাবে কখনো আমাদের সন্তানদের দিয়েছি ? আমরা কি আমাদের সন্তানদের সাথে প্রকৃতপক্ষেই বন্ধুপূর্ন সম্পর্ক বজায় রেখেছি ? আমার মেয়েটি কখন কি করছে, ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে কোথাও অনৈতিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে কিনা, কিভাবে কার সাথে সময় কাটাচ্ছে, একা একা কোথায় যাচ্ছে, কে ই বা তার বন্ধু হচ্ছে, ভার্চুয়াল জগতের অপব্যবহার করছে কিনা তা কি আমরা কখনো খতিয়ে দেখছি ? জানি অনেকের কাছেই এটার না সূচক জবাব আসবে। তাহলে কি সবকিছু হারিয়েই আমরা শিখবো ! প্রিয় সন্তানের এ পরিনতির আগেই আসুন আমরা আমাদের সন্তানের বন্ধু হয়ে যাই। আমার সন্তান আমার কাছেই সবকিছু শেয়ার করুক। অশুভ কোনোকিছু থেকে আমি আমার সন্তানকে দূরে রাখি। নৈতিক শিক্ষা আর সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার মত সাহস যোগাই, প্রয়োজনে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং করি।