বৃষ্টির পানিতে কৃষকের কান্না

এখনই সময় :
বৃষ্টি ও কৃষকের অশ্রুতে ভিজে এখন একাকার ধান ক্ষেত। এক রাতের বৃষ্টিতে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হতে বসেছে বাগেরহাটের চিতলমারীতে। এর মধ্যে প্রায় আড়াইশ হেক্টর জমির কাটা-ধান মাঠে থাকায় মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জরুরীভাবে জলাবদ্ধ পানি নিষ্কাশনের জন্য কৃষকের পাশাপাশি মাঠে নেমে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। কৃষকেরা জমিতে সেচের মেশিন বসিয়ে ধানক্ষেত শুকানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এ পর্যায়ে পানি জমা ক্ষেতের ধান ঠিকভাবে ঘরে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানান কৃষকেরা।
বুধবার ধান ক্ষেতের কাটা-ভেজা ধানের শীষ জড়িয়ে ধরে কৃষকদের কাঁদতে দেখা যায় চরবানিয়ারী ইউনিয়নের শ্যামপাড়া গ্রামের মাঠে। বিভাষ মন্ডল জানান, জনপ্রতি ৮০০ টাকা করে কিষাণ। কিষাণের সাথে পরিবারের সবাই মিলে ধান কেটেছেন। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে এ কী হলো। পুতুল বৈরাগীর ছেলের মতো আরো অনেক কৃষক জরুরীভাবে পাওয়ার পাম্প দিয়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করেছেন। পাকা ধানের শীষগুলো পানির ভারে আরো বেশি মাটিমুখি। প্রায় চার থেকে ছয় ইঞ্চি পানিতে পাকা ধানগাছের গোড়া ডুবে আছে। গোড়াগুলো নরম হতে শুরু করেছে বলে জানান কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বোরো আবাদ হয় ১১ হাজার ৪৭০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৮৫ হাজার ৬১৫ মেট্রিকটন। এর মধ্যে উফশী জাতের ধান রয়েছে নয় প্রকার এবং হাইব্রিড জাতের ধান রয়েছে ৪৩ প্রকার। বৃষ্টি-জলাবদ্ধতায় ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার হেক্টও জমির ধান ঠিকমতো ঘরে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বুধবার সারাদিন এলাকা পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যার দিকে জানান, বৃষ্টি-জলাবদ্ধতা জরুরীভাবে নিষ্কাশনে জন্য অস্থায়ী স্লুইসগেট নির্মাণ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন সেখের উপস্থিতিতে আজ এই কাজ শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব কাজটি শেষ হবে। সদর ইউনিয়নের রায়গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইচগেটের অদুরেই বিকল্প এই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় সাতটি খাল আটকানো রয়েছে। এতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। মঙ্গলবার সারা রাত বৃষ্টির পানি খাল ছাপিয়ে ধান ক্ষেতে জমে আছে। এতে তিন হাজার হেক্টরের অধিক জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে তিনি জানান।